ননী কি? ননীর উপকারিতা জানুন।
ননী কি? What is Noni (Morinda Citrifolia)
উদ্ভিদ বিজ্ঞানে এর নাম মরিন্ডা সিট্রিফলিয়া যা এসেছে দুটি ল্যাতিন শব্দ ‘মোরাস’ যার মানে ‘মালবেরি’ এবং ‘ইন্ডিকা’ যার অর্থ ‘ইন্ডিয়ান’। ননি ফলের গাছ মরিন্ডা সিট্রিফলিয়া গ্রীষ্মমন্ডল এলাকায় ব্যাপকভাবে জন্মায়। কায়ামান দ্বীপপুঞ্জে এটিকে বলা হয় ‘হগ অ্যাপেল’ অস্টেলিয়ায় এটির নাম ‘চীজ ফ্রুট’ বার্মায় এটির পরিচয় ‘নোনা’ নামে। ভারতে এটি ব্যাপকভাবে হয় পশ্চিম ঘাট অঞ্চলে এবং এখানে এর পরিচিত নাম ইন্ডিয়ান মালবেরি বা ভারতীয় তুঁতফল। ননী সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক এবং অর্গানিক।
ননীর উপাদানসমূহঃ
ক. ভিটামিন এ, বি, সি, ই, বি২, বি৬, বি১২
খ. ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, জিঙ্ক, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, কপার, ম্যাগনেসিয়াম, ফলিক এসিড, নিয়াসিন, ক্রোমিয়াম, কার্বহাইড্রেডস, অ্যামাইনো এসিড, মলিবডিয়াম।
গ. স্কোপোলেটিন, অকটাইনক এসিড, টার্পেনয়েডস, অ্যালকালয়েডস, অ্যানথ্রাকুইননস, আর্সেলিক এসিড, ড্যামনাক্যন্থাল, সেলেনিয়াম, প্রোক্সোরোনিন।
জেরোনিন থিওরীঃ
বায়োকেমিষ্ট ডঃ রাল্ফ হেইনিক সর্বপ্রথম এই ননী ফল থেকে স্পটিকের মত একটি পদার্থকে পৃথক করেন যার নাম প্রোক্সেরোনিন। পদার্থটি জেরোনিন নামক আরেকটি পদার্থের সংশ্লেষনের জন্য দায়ী। প্রোক্সোরোনিন থেকে জেরোনিন তৈরী হওয়ার পর সেটি দেহের প্রোটিনের সঙ্গে যুক্ত হয় যাতে সেগুলি কাজ করতে সক্ষম হয়। জেরোনিন ছাড়া প্রোটিন তার কোন কাজ করতে সক্ষম নয়। জেরোনিন কোষ ঝিল্লির ছিদ্রগুলিকে বড় করতে সহায়তা করে ফলে ক্ষুদ্র পুষ্টিদ্রব্য এবং ঔষধ আরো ভালভাবে শোষণ হয়। কিছু কিছু প্রোটিনের একটি নির্দিষ্ট স্থান আছে যেগুলি জেরোনিনের সঙ্গে যুক্ত হতে সাহায্য করে।
হরমোন, অ্যান্টিবডি ও উৎসেচক হিসেবে কাজ করে এমন প্রোটিনের কাজ করার জন্য জেরোনিন প্রয়োজন।
অ্যান্টিবায়োটিক ওষধ বনাম ননীঃ
অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের পর আমেরিকান বিজ্ঞানীরা সদর্পে ঘোষণা করেছিলেন ‘Antibiotics will wipeout illness by the end of 20th century’ অর্থাৎ ‘বিংশ শতাদ্বীর শেষে অ্যান্টিবায়োটিক পৃথিবী থেকে রোগ নির্মূল করে ফেলবে’। কিন্তু তা এখনো সম্ভব হয়নি বরং এর মারাত্নক সাইড ইফেক্ট মানুষের অস্তিত্বকে হুমকির সম্মুখিন করেছে।
মানুষ ফিরে যেতে শুরু করেছে প্রকৃতির কাছে। ফার্মাকোলজিকাল দিক থেকে ননীর মধ্যে দেখা কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যঃ
(ক) অ্যাডাপটোজেন-অ্যাডাপটোজেন হচ্ছে এমন বস্তু শরীরের সমস্থ সিস্টেমের উপর যার একটি ব্যালেন্সিং এফেক্ট বর্তমান। এপর্যন্ত আবিস্কৃত ১২টি অ্যাডাপটোজেন এর মধ্যে ননী জুস হচ্ছে প্রথমসারির অ্যাডাপটোজেন।
(খ) এ্যালকালাইন- আম্লিক পরিবেশে দেহের কোষকলার কার্য্যকারিতা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ননী জুস দেহে আম্লিকভাব কাটিয়ে ক্ষারকীয় বৈশিষ্ট্য নিয়ে আসে।
(গ) এন্টি অক্সিডেন্ট- ফ্রীরাডিক্যালস এবং অন্যান্য কিছু দ্রব্য উঘঅ ড্যামেজ ঘটিয়ে ক্যান্সার ডেকে আনে। এন্টি অক্সিডেন্টের কাজ হচ্ছে ফ্রি র্যাডিক্যাল প্রশমিত করা। ননী হচ্ছে খুব কার্যকরী এন্টি অক্সিডেন্ট।
(ঘ) লো গ্রাইসেমিক ইনডেক্স- ননী জুসে ৩ঃ১ অনুপাতে কার্বোহাইড্রেট ও ফাইবার থাকার কারণে তা ব্লাডপ্রেসার স্বাভাবিক রাখে।
(ঙ) হিউম্যাকট্যান্টঃ আদর্শ হিউম্যাকট্যান্ট হিসেবে ননী জুস টিস্যুর ময়েশ্চার ধরে রাখতে সাহায্য করে।
ননী কোন ঔষধ নয়ঃ
ননী কোন ঔষধ নয়। এটি ফলের রসের সংমিশ্রণ।
এটি কোন ঔষধ বা খাদ্যের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয় না।
এটি ওষধের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
এটি ওষধের সঙ্গে ব্যবহার্য।
মানবদেহে ননীর প্রভাবঃ
ননী কোষীয় কার্য নিয়ন্ত্রণ করে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
পরিপাক ব্যবস্থা উন্নত করে।
টিউমারের বৃদ্ধি কমিয়ে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ বাড়ায় এবং মানসিক চাপ মুক্ত করে।
বয়সজনিত বিভিন্ন সমস্যা যেমন আথ্রাইটিস, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং স্ট্রোক কমায়।
ননী ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ফাংগাসের বিরুদ্ধে কাজ করে।
নাইট্রিক অক্সাইড বৃদ্ধির মাধ্যমে রক্তে অক্সিজেনের সরবরাহ বৃদ্ধিসহ পেশিকে সুগঠিত করে।
ননী ত্বক, চুল ও স্কালপের পরিচর্যা করে।
ননী মূলত অ্যাডোপটোজেন হিসেবে কাজ করে।
মেডিসিন হিসেবে ননীর ব্যবহারঃ
সম্পূরক খাদ্য হিসেবে ননী জুস ও ননী ক্যাপসুল যে সকল রোগের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করত তা হলোঃ হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যান্সার, টিউমার, গ্যাষ্টিক আলসার, রক্তনালীর সমস্যা, কিডনির সমস্যা, টিউবারকুলোসিস, থাইরয়েড সমস্যা ইত্যাদি।
ক্লিনিক্যাল সার্ভে পরিসংখ্যানঃ
ডঃ নীল সলোমন যিনি যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডের হেলথ এন্ড মেন্টাল হাইজিন এর প্রাক্তন ফাস্ট সেক্রেটারী। তিনি ননী জুসের মেডিসিনাল উপকারীতার ওপর এক সঠিক জরিপ চালিয়ে ছিলেন। যেখানে ৫০জন ডাক্তার ও হেলথ্ পেশাজীবির রোগীরা পূর্বেই ননী জুস পান করে ছিলেন বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার জন্য। নীল সলোমন ১০ হাজারেরও বেশি ননী ব্যবহারকারীর ফলাফল পরবর্তী পর্যালোচনা করে দেখতে পান শতকরা ৬৫জন ক্যান্সার রোগীর উপসর্গ কমে, শতকরা ৭২ জনের শক্তিবৃদ্ধি পেয়েছিল ননী ব্যবহার করে, শতকরা ৭৫ জনের অতিরিক্ত ওজন কমে যায়, শতকরা ৮৫ জনের উচ্চ রক্তচাপ কমে যায়। ৮০ ভাগ আথ্রাইটিস ও হৃদরোগীর উপসর্গ কমে যায়। শতকরা ৮৪ জন টাইপ-১ ও টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীর উপসর্গ কমে যায়, শতকরা৮৪ জনের অ্যালার্জির উপসর্গ কমে যায়।
সর্বোপরি ননী জুস পানকারী সকল অংশগ্রহণকারীর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছিল খুবই কম।
ব্যবহার বিধিঃ
সঠিক নিয়মে ও নিয়মিত ননী পানের এর সর্বোচ্চ ফল লাভ করা যায়। ননী সেবন শুরু করতে হয় অল্প মাত্রায়। তবে ডোজ বাড়ানো বা কমানো নির্ভর করে শরীরের অবস্থা বুঝে। উল্লেখ্য যে, ননী পানের সাথে সারাদিন প্রচুর পানি পান করতে হয় এতে বিষাক্ত টক্সিন (জীবাণু) বের হয়ে যায়।
প্রথম তিন দিনঃ
১ চা-চামচ (৫মি.লি), ১৫০ মিলি পানিতে মিশিয়ে সকালে নাস্তার ৩০ মি. পূর্বে।
১ চা-চামচ (৫মি.লি), ১৫০ মিলি পানিতে মিশিয়ে রাতের খাবারের ৩০ মি. পূর্বে।
চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ দিনঃ
২ চা-চামচ (১০মি.লি), ১৫০ মিলি পানিতে মিশিয়ে সকালে নাস্তার ৩০ মি. পূর্বে।
২ চা-চামচ (১০মি.লি), ১৫০ মিলি পানিতে মিশিয়ে রাতের খাবারের ৩০ মি. পূর্বে।
বিঃদ্রঃ এপোলো ননী জুস নিয়মমাফিক ও দীর্ঘমেয়াদে পান করার পর আপনার শরীরের পরিবর্তন সহজে বুঝতে পারবেন। যেহেতু এটি একটি সম্পূরক খাদ্য তাই এতে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে। তবে মাথা ব্যাথা, বমিভাব, কফ ও ডায়রিয়া ইত্যাদি প্রাথমিক অবস্থায় হতে পারে যা ক্ষনস্থায়ী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
সরাসরি পেতে ফোন করুনঃ 01819-520009
ননী সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্যঃ
www.facebook.com/BibortonHealthScience
www.naturalstandard.com on August 4, 2009
www.nccam.nih.gov
www.nlm.nih.gov/medlineplus/druginfo/natural/758.html
www.sarinoni.com/medical.html
www.fightingcancer.com/facts
www.incc.org (for testimonial)