Blog

Moringa বা সজিনা কি এবং এর উপকারিতা

সজিনা বিষয়ে অবাক করা বিষয়গুলো প্রত্যেকের জানা উচিত

সজিনা যার বৈজ্ঞানিক নাম Moringa oleifera যার দরুন এটিকে Moringa হিসেবে অনেকের কাছে পরিচিত। এটি সাঁজনা নামে আমাদের দেশে পরিচিত। অত্যন্ত পুষ্টিকর ও বিভিন্ন খাদ্যগুণসমৃদ্ধ সবজি। সজিনা গাছকে প্রচলিত বিভিন্ন খাদ্য প্রজাতির মধ্যে সর্বোচ্চ পুষ্টিমানসম্পন্ন উদ্ভিদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বহুবিধ খাদ্যগুণসম্পন্ন হওয়ায় দক্ষিণ আফ্রিকায় সজিনা গাছকে জাদুর গাছ’ হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়েছে।

কথিত আছে সজিনা ৩০০ প্রকার ব্যাধির প্রতিষেধক হিসেবে ব্যাবহৃত হয়। শরীরের প্রয়োজনীয় প্রায় সব ভিটামিনের সাথে আবশ্যকীয় প্রায় সবগুলি এমাইনো এসিড সজিনা পাতায় বিদ্যমান বলে বিজ্ঞানীরা একে পুষ্টির ডিনামাইট ” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন । প্রধান ঔষধি রাসায়নিক পদার্থ হচ্ছে– বিটা সিটোস্টেরোলএক্যালয়েডস-মোরিনাজিন। আর ফুলে আছে জীবানুনাশক টিরিগোজপারমিন। এর মধ্যে আছে ভিটামিন এবিসিনিকোটিনিক এসিডপ্রোটিন ও চর্বি জাতীয় পদার্থকার্বোহাইড্রেট ইত্যাদি।

বাংলাদেশে সজিনা নামেই পরিচিত। ইংরেজিতে সজিনার নাম ‘ড্রামস্ট্রিক’, যার অর্থ ঢোলের লাঠি। নামটি অদ্ভুত হলেও এটি  অতিপ্রয়োজনীয় জীবনরক্ষাকারী উদ্ভিদ। বাংলাদেশে এটি নিয়ে তেমন গবেষণা না হলেও বিশ্বের বহু দেশে এ নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে; বিশেষ করে গাছ বৃদ্ধিকারক হরমোন, ওষুধ, কাগজ তৈরি ইত্যাদি।

আমাদের দেশে এটি সবজির পাশাপাশি ওষুধ হিসেবেও ব্যবহার হয়ে আসছে। সজিনার অ্যানিমিয়া, জয়েন্ট পেইন, ক্যান্সার, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়াবেটিস, ডায়রিয়া, হার্ড পেইন, ব্লাডপেসারসহ বিভিন্ন রোগে উপকারী ওষধি গুণ রয়েছে। সজিনায় রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ভিটামিন।

আমরা প্রথমে দেখব এটি কতটুকু পুষ্টিকর

সজিনা গাছের পাতা, ফুল, ফল এবং গাছের ছাল ও শিকড়ও পুষ্টিকর। কতটুকু পুষ্টিকর? সজিনার শুকনো পাতার গুড়ো দুধের চেয়ে ১৭গুণ বেশি ক্যালসিয়াম, পালং শাকের চেয়ে ২৫গুণ বেশি আয়রন,  ডিমের চেয়ে ৩৬গুণ বেশি ম্যাগনেশিয়াম, বাদামের চেয়ে ৫০গুণ বেশি ভিটামিন বি৩, কলার চেয়ে ১৫গুণ বেশি পটাশিয়াম, গাজরের চেয়ে ১০গুণ বেশি ভিটামিন এ এমন অসংখ্য গুণের অধিকারী এই আশ্চার্য্য গাছটি।

এবার দেখে নিই প্রতি ১০০ গ্রাম সজিনা বা Moringa’র গুণাগুনঃ

সজিনার ঔষধিগুণঃ

  • । মুখে রুচি বাড়েঃ সজনে ডাঁটার মতো এর পাতারও রয়েছে যথেষ্ট গুণ। সজনে পাতা শাক হিসেবেভর্তা করেও খাওয়া যায়। এতে মুখের রুচি আসে।
  • । শ্বাসকষ্ট কমাতেঃ  সজনে পাতার রস খাওয়ালে শ্বাসকষ্ট সারে। তাছাড়া পাতাকে অনেকক্ষণ সিদ্ধ করে তা থেকে যেই ঘন রস পাওয়া যায়  হিং (এক ধরনের বৃক্ষ বিশেষ) ও শুকনো আদার গুঁড়ো মিশিয়ে খাওয়ালে পেটের গ্যাস বেরিয়ে যায়।
  • । রক্ত চাপ কমাতেঃ বার্মিজ চিকিৎসকদের মতে সজনের পাকা পাতার টাটকা রস দুবেলা খাবাবের ঠিক আগে ২-৩ চা চামচ করে খেলে উচ্চ রক্ত চাপ কমে যায়। তবে ডায়াবেটিস থাকলে তা খাওয়া নিষেধ। 
  • । ফোঁড়া গলাতেঃ সজনে পাতার বেটে অল্প গরম করে ফোঁড়ার ওপর লাগালে ফোঁড়া ফেটে যায়। 
  • । খুসকির জন্যঃ সজনে পাতার রস মাথায় ঘষলে খুসকি দূর হয়।
  • । ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতেঃ সজনা পাতার রসে ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করার ক্ষমতাও রয়েছে।
  • ৭। উচ্চ রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণেঃ  সজনে ডাঁটা খাওয়া উচ্চ রক্ত চাপের রোগীদের জন্য বেশ উপকারী। সজনে দেহের কোলেস্টোরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া উচ্চ রক্ত চাপের চিকিৎসায় সজনের পাতাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সজনের পাতার (কচিনয়) রস প্রতিদিন নিয়ম করে ৪-৬ চা চামচ খেলে উচ্চ রক্ত চাপের সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়।
  • ৮। টিউমার বা আঘাত জনিত ফোলা উপশমেঃ  টিউমার যখন একেবারে প্রাথমিক অবস্থায় থাকে তখন সজনের পাতা এই টিউমার নিরাময় করতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় টিউমার ধরা পরলে তাতে সজনে পাতা বেটে প্রলেপের মতো ব্যবহার করলে টিউমারের ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া ব্যথা বা আঘাত পেলে দেহের কোনো অংশ ফুলে উঠলে একই উপায়ে তা নিরাময় করা সম্ভব।
  • ৯। বাতের ব্যথা উপশমেঃ  বাতের ব্যথা উপশমে সজনে গাছের ছাল বেশ কার্যকর। এই পদ্ধতি বেশ প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে। সজনে গাছের ছাল তুলে তা বেটে রস চিপে নিয়ে এই রস নিয়মিত প্রতিদিন ৪-৬ চা চামচ খেলে বাতের ব্যথা প্রায় ৬৫% উপশম হয়।
  • ১০। দাঁতের মাড়ির সুরক্ষায়ঃ  অনেক সময় দাঁতের মাড়ির সমসসায় ভুগে থাকেন অনেকে। দাঁতের গোড়া থেকে রক্ত পড়া এবং মাড়ি ফুলে যাওয়া সমস্যায় ইদানীং অনেককে পড়তে দেখা যায়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে সজনে পাতা। সজনে পাতা ১/২ মগ পানিতে ফুটিয়ে নিয়ে সেই পানি দিয়ে ভালও করে প্রতিদিন কুলকুচা করতে হবে। এতে মাড়ির সকল সমস্যার সমাধান হয়।
    ১১। হেঁচকি ওঠা উপশমেঃহেঁচকি ওঠা যে কতো কষ্টের তা যারা ভুক্তভোগী তারা ঠিকই জানেন। একবার হেঁচকি উঠা শুরু করলে তা বন্ধ হতে চায় না সহজে। কিন্তু সজনে এই সমস্যার সমাধান করতে পারে বেশ সহজে। সজনে পাতার রস ৯/১০ ফোঁটা আধ গ্লাস দুধের সাথে মিশিয়ে পান করে ফেলুন এক নিঃশ্বাসে। দেখবেন হেঁচকি ওঠা দ্রুত বন্ধ হয়ে যাবে।
  • ১২। পেটের সমস্যা সমাধানেঃবহুকাল আগে থেকে সজনে হজমের সহায়ক খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। পেটে গ্যাস হলেবদহজম হলে এবং পেটে ব্যথা হলে সজনের তৈরি তরকারীর ঝোল খেয়ে নিন। দেখবেন পেটের গোলমাল অনেক উপশম হয়ে গিয়েছে।
  • । শরীর ব্যাথাঃ শরীরের কোন স্থানে ব্যথা হলে বা ফুলে গেলে সজিনার শিকড় বেটে প্রলেপ দিলে ব্যথা এবং ফোলা সেরে যায়।
  • ১৪। কান ব্যথাঃ শেকড়ের রস কানে দিলে কানের ব্যথা ভাল হয়ে যায়।
  • ১৫। মাথা ব্যথাঃ সজিনার আঠা দুধের সাথে খেলে মাথা ব্যথা সেরে যায়। আঠা কপালে মালিশ করিলে মাথা ব্যথা সেরে যায়। ফোড়া হলে সাজিনার আঠা প্রলেপ দিলে সেরে যায়।
  • ১৬। মুত্রপাথরীঃ সজিনা ফুলের রস দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে মুত্রপাথরী থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
  • ১৭। শিশুদের পেটের গ্যাসঃ সজিনা পাতার রসের সাথে লবণ মিশিয়ে খেতে দিলে বাচ্চাদের পেটে জমা গ্যাস দূর হয়।
  • ১৮। কুকুরে কামড়েঃ  সজিনা পাতা পেষণ করে তাতে রসুনহলুদলবণ ও গোল মরিচ মিশিয়ে সেবন করলে কুকুরের বিষ নষ্ট হয়।
  • ১৯। জ্বরসর্দিঃ  পাতার শাক খেলে জ্বর ও যন্ত্রণাদায়ক সর্দি আরোগ্য হয়।
  • ২০। গর্ভপাতকারকঃ  সজিনা গর্ভপাত কারক। সজিনার ছাল গর্ভাশয়ের মুখে প্রবেশ করালে গর্ভাশয়ের মুখ প্রসারিত হয়ে যায় এবং গর্ভপাত ঘটে
  • ২১। কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণেঃসজিনা শরীরে কোলেস্টরেলের মাত্রা ঠিক রাখে।
  • ২২। গ্লুকোজ কমাতেঃমানুষের শরীরে চিনির মাত্রা সমান রাখে ও ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে। এতে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় অ্যামিনো এসিড পাওয়া যায়।
  • ২৩। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেঃহজমে সাহায্য করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।শরীরে পুষ্টি ও শক্তি জোগায়।
  • ২৪। লিভার ও কিডনির সুরক্ষায়ঃসজিনা লিভার ও কিডনি সুরক্ষিত রাখে।
  • ২৫। বাড়তি ওজন কমাতেঃশরীরের বাড়তি ওজন কমাতে সাহায্য করে।
  • ২৬। যৌনশক্তি বাড়াতেঃপুরুষের যৌনশক্তি বৃদ্ধি ও দীর্ঘস্থায়ী করে ।
  • ২৭। কৃমিনাশক হিসেবেঃকৃমিনাশক হিসেবে সজিনা ব্যবহার করা যায়।
  • সজিনায় রয়েছে ৪৬টি এন্টি-অক্সিডেন্ট এবং ৩৬টি এন্টি-ইনফ্লেমেটরী কম্পাউন্ড, ৮ টি প্রয়োজনীয় এমাইনো এসিড
  • এই মরিঙ্গা/সজিনা পাতা থেকে আমরা তৈরী করছি খুবই সূলভমূল্যের ট্যাবলেট (এখানে ক্লিক করুন)

Related posts

Leave a Comment