বয়স অনুযায়ী খাদ্য তালিকা
বয়সের সাথে সাথে খাবারের চাহিদা ও রুচি পরিবর্তিত হতে থাকে। মুখরোচক খাদ্যের প্রতি সব ধরনের মানুষের চাহিদা থাকে বেশি সেটা কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত তা আমরা যাচাই না করেই অনেক সময় খেয়ে থাকি। কিন্তু বয়সভেদে খাদ্যের মেন্যুতে পরিবর্তন অত্যাবশ্যক। আসুন দেখে নেয়া যাক কোন বয়সে খাবার তালিকায় কি কি থাকা উচিতঃ
৬মাস থেকে ১ বছরঃ জন্মের পর থেকে ছয় মাস পর্যন্ত মায়ের দুধই শিশুর সব চাহিদা পুরণ করতে পারে। ছয় মাস পর থেকে শিশুকে মায়ের দুধের পাশাপাশি পুস্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিপূরক খাবারের অভ্যাস করতে হবে। পরিপূরক খাবার প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেলস ও ফাইবারযুক্ত হতে হবে। শিশুর জন্য নরম, সহজপাচ্য ও কম মসলাযুক্ত খাবার ঘরে বানিয়ে খাওয়াতে হবে। যেমন- সবজি খিচুড়ি, মাছ ও মুরগির খিচুড়ি, ডিম সিদ্ধ নরম করে খাওয়াতে হবে।
১ বছর থেকে ৫ বছরঃ এ বয়সের বাচ্চারা খাবারের প্রতি আগ্রহ কম থাকে। সময়মত না খাওয়ালে এ বয়সের বাচ্চারের খাবারের অরুচি চলে আসে। শিশুরা খেলাধুলা ও দুষ্টুমির জন্য খেতে চায় না। এ বয়সে প্রোটিনযুক্ত খাবার বেশি দেয়া উচিত যেমন মাছ, মাংস ইত্যাদি। অধিক আঁশযুক্ত বা ভুসিযুক্ত খাবার কম দেয়া ভাল যেমন শাক-সবজি। ভিটামিনের জন্য ফলমূল প্রয়োজন আর ছোট মাছ। মিষ্টি জাতীয় খাদ্য তুলনামূলক কম খাওয়ানো উচিত।
৬ থেকে ১২ বছরঃ এ বয়সী বাচ্চাদের বাইরের খাবারের প্রতি ঝোঁক বেড়ে যায় বিশেষ করে চিপস্, ভাজাপোড়া, চকোলেট ইত্যাদি। এসব খাবার থেকে বাচ্চাদের মুখ ফেরানোর উপায় নেই তবে যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করতে হবে যাতে এসব খাদ্য এড়িয়ে চলে। প্রোটিনের পাশাপাশি দুধ, ডিম জাতীয় খাদ্য। এ বয়সে বারবার খাওয়ার অভ্যেস করতে হবে। খেলাধুলার কারণে শরীরের ঘাম হয় প্রচুর যার দরুন অন্তত সপ্তাহে ২/৩দিন স্যালাইন খাওয়াতে হবে।
১২ থেকে ১৯ বছরঃ এ বয়সে ক্যালরি ও প্রোটিনের চাহিদা বেড়ে যায়। এ সময় ক্ষুধা বাড়ে এবং শর্করা জাতীয় খাবারে প্রতি ঝোঁক বাড়ে। এ বয়সে ছেলেদের ক্যালসিয়াম জাতীয় এবং লৌহ জাতীয় খাবার বেশি প্রয়োজন। এজন্য কলিজা, ডিম, কচুশাক, পালংশাক, ডাল জাতীয় খাবার বেশি খেতে দিতে হবে।
২০ থেকে ২৯ বছরঃ এ বয়সে পড়াশোনা, ঘুরাঘুরি, চাকরি-বাকরির সময়, এ বয়সে প্রচুর মানসিক চাপও থাকে। সব কিছুর মাঝেও নিজের শরীরের প্রতি কিছুটা মনোযোগ খুবই প্রয়োজন কারন বিশেষ করে সকালের নাস্তা ও দুপুরের মেন্যুতে প্রোটিনের পাশাপাশি পটাশিয়াম (কলা জাতীয় ফল) এবং ভিটামিন এর জন্য প্রচুর সবজি খাওয়ার অভ্যেস করতে হবে। গ্রীন টি বা লেমন টি খাওয়ার অভ্যেস করতে হবে। পরিশ্রম অনুযায়ী এ বয়সে খাবার গ্রহণ করতে হবে।
৩০ থেকে ৪০ বছরঃ এ বয়সে পুরুষের চেয়ে নারীদের অনেক বেশি স্বাস্থ্য সচেতনতা আবশ্যক। মেয়েদের ক্ষেত্রে ফোলেট সম্পন্ন খাবার যেমন ছোলা, পালংশাক, ব্রোকলি, কমলার জুস ইত্যাদি খুবই প্রয়োজন। আয়রনের ঘাটতি মেটাতে মিষ্টি কুমড়া, সয়াবিন, মুরগির মাংস, শুকনা ফলমূল। পুরুষদের জন্য ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস খাবার যেমন- ডার্ক চকোলেট, কফি এবং নানা ধরনের সবজি প্রয়োজন কারন এসব হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। তাছাড়া ওমেগা-৩,৬,৯ এ বয়সে গ্রহণ করলে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও অন্যান্য রোগের ঝুঁকি কমে।
৪১ থেকে ৫০ উর্দ্ধো বয়সঃ এ বয়সের জন্য খুবই প্রয়োজন ক্যালসিয়াম। প্রতিদিনের খাবার তালিকায় দুধ, বরবটি, কাজুবাদাম, কপি, ঢেঁড়শ, পালং শাক ইত্যাদি প্রয়োজন। ভিটামিন ডি সম্পন্ন খাদ্য এ বয়সে জরুরী যা শরীরের ক্যালসিয়াম শোষনে সাহায্য করে। নিয়মিত ব্যায়াম ও পরিমিত খাদ্য গ্রহণ এ বয়সে বিকল্প নেই।
সবগুলো লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন